ভালোবাসা মানেই একসাথে জীবন কাটানো।
কিন্তু ভালোবাসার এক পর্যায়ে সংসার জীবনের ছেলে মেয়েদের জন্য নিরাপদ ভবিষ্যত চায় বাবা মা, আর এই নিরাপদ ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখা সেই বাবা মার জন্য বড় একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দারায় যদি সন্তান অসুস্থতায় ভুগে।
এই পথচলা আরও সুন্দর হতে যদি প্রথম থেকেই আপনি আপনার “সঙ্গীর রক্তের গ্রুপ জেনে নেন।”
ভাবছেন, “রক্তের গ্রুপ আবার জানার কী দরকার?”
আসুন, একটু হালকা হালকা সিরিয়াস কথায় বিষয়টা ক্লিয়ার করি।ভালোবাসা মানেই একসাথে জীবন কাটানো।
🧬 ১। Rh Factor: এইটা নিয়ে যদি না জানেন, বিপদে পড়তে পারেন
ধরেন, স্ত্রী Rh-negative, স্বামী Rh-positive।
সন্তান যদি বাবার মত Rh-positive হয়ে যায়, তাহলে মায়ের শরীর ভাবতে পারে – “এইটা তো নিজের না!” ১ম সন্তান ডেলিভারি এর সময় নবজাতক সন্তানের পজিটিভ ব্লাড মায়ের নেগেটিভ ব্লাডে স্থানান্তরিত হতে পারে। ঠিক সেই সময় যদি Anti-D ইঞ্জেকশন বাচ্চা ডেলিভারির ৭২ ঘন্টার মধ্যে দিতে হবেই( ভিবিন্ন দেশে Routine Antenatal Checkup এর সময় ২৮ সপ্তাহের গর্ভাবস্থায় Anti-D ইঞ্জেকশন দিয়ে দেওয়া হয়), যদি ইঞ্জেকশন না নেয় কেউ তাহলে ১ম সন্তান স্বাভাবিক সুস্থ জন্ম নিলেও পরবর্তী গর্ভাবস্থায়
শুরু হতে পারে immune attack( ২য় গর্ভাবস্থায়) – মায়ের শরীর শিশুর রক্তকণিকা ধ্বংস করতে পারে।
ফলাফল: পরবর্তী প্রেগন্যান্সিতে সমস্যা, বাচ্চা দুর্বল বা মৃত্যুও হতে পারে। এট যে কারনে তাকে বলা হয় Rh Incompatibilty , আর এই সমস্যাকে বলা হয় Hemolytic Disease Of Newborn অথবা Erythroblastosis Fetalis. এই বাচ্চা নিচের সমস্যা গুলো দেখা দিবেঃ
- নবজাতকের লক্ষণ:
- জন্ডিস (Jaundice)
- বাচ্চার ত্বক ও চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যাওয়া
- খুব বেশি পরিমাণে bilirubin জমে যায় (hyperbilirubinemia)
- রক্তশূন্যতা (Anemia)
- লোহিত রক্তকণিকার ঘাটতি
- দুর্বলতা, নিস্তেজতা দেখা যেতে পারে
- Hydrops Fetalis
- শরীরের বিভিন্ন অংশে পানি জমা (বুকে, পেটে, ত্বকের নিচে)
- এটা একটি গুরুতর অবস্থা
- লিভার ও প্লীহা (spleen) বড় হয়ে যাওয়া
- বাচ্চার পেটে ফোলাভাব দেখা যেতে পারে
- ব্রেইন ড্যামেজ (Kernicterus)
- অতিরিক্ত bilirubin মস্তিষ্কে পৌঁছে গেলে স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে
- নবজাতকের মৃত্যু
সমাধান? একটা ইনজেকশন – Anti-D।
কিন্তু সেইটা সময়ে দিতে হলে আগে জানতে হবে, তাই না?

২। থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে
থ্যালাসেমিয়া একটা জিনগত সমস্যা – কেউ কেউ এর ক্যারিয়ার হন, কিন্তু তারা নিজেরাই টের পান না। বিশ্বে থ্যালাসেমিয়ার ক্যারিয়ার রোগীর সংখ্যা ৭-৮%। মানে ১০০ জনে ৭-৮ জন থ্যালাসেমিয়া সুপ্তাবস্থায় (Minor) দিয়ে আক্রান্ত।
বিয়ের পর যদি দেখা যায় দুজনেই ক্যারিয়ার, তাহলে সন্তানের জন্য বড় বিপদ।
- প্রতি সন্তানের ক্ষেত্রে ২৫% চান্স থাকে থ্যালাসেমিয়া মেজর হওয়ার।
- আজীবন ব্লাড ট্রান্সফিউশন লাগবে।
- ইমোশনাল, ফাইনান্সিয়াল — সব দিক থেকে ঝামেলা।
📌 একটা ছোট্ট রক্ত পরীক্ষা – Hb Electrophoresis বা HPLC করালেই বোঝা যায়।
👉 মজার কথা হলো, আপনি ভাবতেই পারেন, “আমার তো কোনো সমস্যা নেই!” — কিন্তু সুপ্ত ক্যারিয়ারদের চেহারা দেখে কিছু বলা যায় না! ঘটনা এমনো দেখা যায় থ্যালাসেমিয়া মাইনর এর একজন পেশেন্ট বয়স ২০ এর পর এনেমিয়ার বা রক্তস্বল্পতার কারনে রক্তের হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার কারনে বিভিন্ন অসুস্থতার পরে বুঝতে পরে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে ডায়ানোসিস হয় সে মাইনর থ্যালাসেমিয়ার পেশেন্ট। সাধারনত শারীরিক দুর্বলতা অনেক দিন পর্যন্ত থাকা, শ্বাসকষ্ট, হৃদস্পন্দন বেশি থাকা, হাত পা ঠান্ডা থাকা, চোখে ঝাপসা বা মাথা ঘোরা ইত্যাদি সিম্পটম থাকে একজন এনেমিক বা রক্তস্বল্পতার রুগির।
🤝 ৩। ইমার্জেন্সি পরিস্থিতি যেকোনো সময় চলে আসতে পারে। — রক্তের গ্রুপ জানা থাকলে সহজেই ডোনার খুজে পাওয়া যায়।
ধরেন কোথাও ঘুরতে গেছেন, দুর্ঘটনা ঘটল।
হাসপাতালে গিয়ে তারা বলল, “রক্তের গ্রুপ কি?”
আপনি বললেন, “আচ্ছা দেখি তো, ফেসবুক প্রোফাইলে কিছু লেখা আছে কিনা!” 😅 রক্ত পরীক্ষা করে সময় নষ্ট হবে যখন প্রতি সেকেন্ড এর মূল্যে মৃত্যু সন্নিকটে।
এই টেনশনে না পড়তে চাইলে – আগেই জানা ভালো।
👶 ৪। গর্ভাবস্থা এবং ডেলিভারির সময় চিকিৎসকদের জন্য কাজে লাগে
- কোন গ্রুপে ঝুঁকি আছে?
- Rh incompatibility হবে কিনা?
- রক্তের প্রয়োজন হলে আগে থেকেই প্ল্যান করা যায় যদি রক্ত পরীক্ষা করে রক্তের গ্রুপ জানা থাকে
ডাক্তারের কাজ সহজ, আপনার জীবনও সুরক্ষিত।
❤️ শেষ কথায় আসি:
বিয়ের আগে আপনার সঙ্গীর প্রিয় খাবার, সিনেমার পছন্দ এসব জানেন, তাই না?
তাহলে রক্ত পরীক্ষা ও গ্রুপ জানলে ক্ষতি কী? আর প্রপোজ করার সাথে সাথে ব্লাড গ্রুপ জেনে নেওয়া ও ব্লাড টেস্ট করা দিনে দিনে স্বাভাবিক ঘটনায় পরিনত হচ্ছে যেটাকে পজিটিভ দৃষ্টিতে দেখাটাই উওম ভবিষ্যত সুন্দর এর জন্য।
“তোমার ব্লাড গ্রুপটা কি ?” 😜